ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

ইসলাম বিরোধী শিক্ষা নীতি বাতিলের দাবী হেফাজতের

Hefajot-Picপ্রেস বিজ্ঞপ্তি:
ইসলাম বিরোধী শিক্ষা নীতি ও শিক্ষা আইন সংশোধন পূর্বক জাতীয় আকংকার প্রতি সংগতি পূর্ণ শিক্ষা নীতি ও আইন প্রণয়ের দাবীতে এবং স্কুল কলেজের পাঠ্য পুস্তকে হিন্দুত্ববাদ প্রতিষ্ঠার প্রতিবাদে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কর্মসূচীর আওতায় কক্সবাজার জেলা হেফাজত ইসলামের এক প্রতিনিধি দল সোমবার বেলা সাড়ে ১১টায় কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করেছেন।
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ কক্সবাজার জেলা সহ-সভাপতি মাওলানা হাফেজ ছালামতুল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মোহাম্মদ ইয়াছিন হাবিবের নেতৃত্বে কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের সাথে সাক্ষাত পূর্বক প্রধানমন্ত্রীর বরাবরে স্মারকলিপি প্রদানকালে অন্যান্যদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন জেলা হেফাজতে ইসলামের নেতা মাওলানা নুরুল হক চকোরী, মাওলানা মনজুর এলাহী, মাওলানা আবদুর রাজ্জাক, মাওলানা মোহাম্মদ খালেদ সাইফী, হাফেজ আজিজুল হক, হাফেজ আবুল খাইর প্রমুখ।
স্মারকলিপিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, বর্তমানে স্কুল পর্যায়ের পাঠ্যপুস্তকে ইসলামী ভাবধারার লেখা বাদ দিয়ে মুসলিম ছাত্র-ছাত্রীদেরকে গরুকে মায়ের সম্মান, পাঁঠাবলির নিয়ম, হিন্দুদের তীর্থস্থানের ভ্রমণ কাহিনী এবং হিন্দু রীতিনীতি ও দেব-দেবীর নামে প্রার্থনা করার বিষয়ে পড়ানো হচ্ছে। সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যমূলকভাবে চলতি উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে ইসলামী আকিদা-বিশ্বাস এবং দাড়ি-টুপি ও পীর-মাশায়েখবিরোধী কাল্পনিক কাহিনীর প্রশ্ন জুড়ে দিয়ে লক্ষ লক্ষ মুসলিম ছাত্র-ছাত্রীকে ইসলামবিরোধী ও হিন্দুত্ববাদের মহানুভবতা প্রকাশ পায় এমন উত্তর লিখতে বাধ্য করা হয়েছে। পাশাপাশি আমরা মনে করি, স্কুল-কলেজের বর্তমান ইসলামবিচ্ছিন্ন শিক্ষাব্যবস্থাকে আইনি ভিত্তিদান এবং কওমি মাদ্রাসাসমূহকে নিয়ন্ত্রণে নেয়ার অসৎ উদ্দেশ্যে আপনার সরকারের প্রস্তাবিত শিক্ষা আইন-২০১৬ নামে একটি বিতর্কিত খসড়া আইন প্রকাশ করে তড়িঘড়ি পাস করার উদ্যোগ নিয়েছে। যা বৃহৎ সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম নাগরিকদের ধর্মীয় বিশ্বাস ও নৈতিক আদর্শের বিরোধী বলে আমরা মনে করি।
হেফাজত নেতৃবৃন্দ বলেন, দেশ ও জাতি গঠনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থায় আপনার সরকার কর্তৃক পরিচালিত শিক্ষা মন্ত্রণালয় ধর্মীয় শিক্ষাকে শুধু সংকোচনই করেনি, বরং ইসলামধর্ম বিষয়ক এবং মুসলিম সংস্কৃতির প্রতি উদ্দীপনামূলক গল্প-রচনা ও কবিতাসমূহ বাদ দিয়ে তদস্থলে নাস্তিক্যবাদ ও হিন্দুত্ববাদের প্রতি উদ্দীপনামূলক বিভিন্ন রচনা, গল্প ও কবিতা একতরফা প্রতিস্থাপিত করেছে। বর্তমানে মুসলিম ছাত্র-ছাত্রীদেরকে স্কুলের পাঠ্যপুস্তকে নতুন সংযোজিত বিতর্কিত পাঠসমূহের মাধ্যমে পরোক্ষভাবে নাস্তিক্যবাদ ও হিন্দুত্ববাদেরই পাঠ দেওয়া হয়ে থাকে। এর মাধ্যমে কোমলমতি কোটি কোটি মুসলমানের সন্তানদের ইসলামবিমুখ করার পাশাপাশি নাস্তিক্যবাদ ও হিন্দুত্ববাদের শিক্ষা দিয়ে ঈমানহারা করার পাঁয়তারা চলছে। দেশের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জাতিসত্তার বিরুদ্ধে এটা ভয়াবহ ষড়যন্ত্র। সন্দেহ নেই সরকারের ভেতর লুকিয়ে থাকা একটি ইসলামবিদ্বেষী বাম নাস্তিক চক্রই এসবের সাথে জড়িত। বলা বাহুল্য যে, বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা চালু থাকলে কোটি কোটি মুসলমানের সন্তান ঈমানহারা হতে বেশি দেরি লাগবে না।
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, আজ দেশের স্কুল-কলেজগুলোতে পড়–য়া কোটি কোটি মুসলমানের সন্তানদের ঈমান-আকিদা নিয়ে অভিভাবকরা আশঙ্কায় ভুগছেন; কেননা ইসলামবিদ্বেষী ও মুসলমানদের প্রতি বর্ণবাদী মনোভাব পোষণকারী তথাকথিত সেকুলার লেখকদের লেখা প্রায় প্রত্যেক শ্রেণীর পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। প্রথম শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত গল্প ও কবিতার সংখ্যা সর্বমোট ১৯৩টি। এর মধ্যে হিন্দু এবং উগ্র ইসলামবিদ্বেষী নাস্তিকদের লেখার সংখ্যা হলো ১৩৭টি। এমনকি অবশিষ্ট লেখাগুলোর মধ্যেও ইসলামী ভাবধারার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ কোন লেখা নেই। জাতীয় শিক্ষাবোর্ডসহ অন্যান্য সকল বোর্ডের নিয়ন্ত্রণমূলক গুরুত্বপূর্ণ শীর্ষ পদগুলোতে যোগ্য মুসলমানদের প্রতি বৈষম্য করে উদ্দেশ্য বিবেচনায় সংখ্যালঘুদের নির্বিচারে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, আমরা আবারও নিশ্চিত করে বলতে চাই, আমরা অবশ্যই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পক্ষে। সংখ্যালঘুদের সার্বিক নিরাপত্তা, সুযোগ-সুবিধা ও নাগরিক অধিকারের সুরক্ষা নিশ্চিত করা ইসলামের শিক্ষা। প্রশাসনিক ও আইনশৃঙ্খলার বিভিন্ন পদে আনুপাতিক হারে সংখ্যালঘুদের উপস্থিতি থাকার বিরোধী নই আমরা। কিন্তু রহস্যজনকভাবে জাতীয় শিক্ষাকার্যক্রমসহ সরকারের বিভিন্ন শীর্ষ ও অতি গুরুত্বপূর্ণ পদে উচ্চহারে সংখ্যালঘুদের নিয়োগ ও পদায়ন অবশ্যই উদ্বেগ তৈরি হওয়ার মতো বিষয়।
হেফাজত নেতৃবৃন্দ ইসলামবিরোধী শিক্ষানীতি ও শিক্ষা আইন সংশোধনপূর্বক জাতীয় আকাঙ্কার প্রতি সঙ্গতিপূর্ণ শিক্ষানীতি ও আইন প্রণয়নের জন্যে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন এবং অবিলম্বে স্কুল-কলেজের পাঠ্যপুস্তক থেকে ইসলামবিদ্বেষী নাস্তিক্যবাদ ও উগ্র হিন্দুত্ববাদের বিষয়গুলো বাদ দিয়ে তদস্থলে বৃহৎ মুসলিম জনগোষ্ঠির ধর্মীয় চিন্তা ও আদর্শের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ ইসলামী ভাবধারা এবং মুসলিম ইতিহাস-ঐতিহ্যের প্রতি উদ্দীপনামূলক রচনা, গল্প ও কবিতা পুনরায় বহাল রাখার দাবি জানান।

পাঠ্যপুস্তকে বাংলা বই থেকে বাদ দেওয়া বিষয়গুলো হচ্ছে:
১) দ্বিতীয় শ্রেণী: বাদ দেওয়া হয়েছে ‘সবাই মিলে করি কাজ’ শিরোনামে মুসলমানদের শেষ নবীর সংক্ষিপ্ত জীবনচরিত।

২) তৃতীয় শ্রেণী: বাদ দেওয়া হয়েছে ‘খলিফা হযরত আবু বকর’ শিরোনামে একটি সংক্ষিপ্ত জীবনচরিত।

৩) চতুর্থ শ্রেণী: খলিফা হযরত ওমর এর সংক্ষিপ্ত জীবনচরিত বাদ দেওয়া হয়েছে।

৪) পঞ্চম শ্রেণী: ‘বিদায় হজ্জ’ নামক শেষ নবীর সংক্ষিপ্ত জীবনচরিত বাদ দেওয়া হয়েছে।

৫) পঞ্চম শ্রেণী: বাদ দেওয়া হয়েছে কাজী কাদের নেওয়াজের লিখিত ‘শিক্ষা গুরুর মর্যাদা’ নামক একটি কবিতা। যাতে বাদশাহ আলমগীরের মহত্ত্বের বর্ণনা উঠে এসেছে। এবং শিক্ষক ও ছাত্রের মধ্যে আদব কেমন হওয়া উচিত, তা বর্ণনা করা হয়েছিলো।

৬) পঞ্চম শ্রেণী: শহীদ তিতুমীর নামক একটি জীবনচরিত বাদ দেওয়া হয়েছে। এ প্রবন্ধটিতে মুসলিম নেতা শহীদ তিতুমীরের ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার জন্যে সংগ্রামের ঘটনার উল্লেখ ছিলো।

৭) ষষ্ঠ শ্রেণী: ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ লিখিত ‘সততার পুরস্কার’ নামক একটি ধর্মীয় শিক্ষণীয় ঘটনা বাদ দেওয়া হয়েছে।

৮) ষষ্ঠ শ্রেণী: মুসলিম দেশে ভ্রমণ কাহিনী- ‘নীলনদ আর পিরামিডের দেশ’ নামক মিসর ভ্রমণের উপর লেখাটি বাদ দেওয়া হয়েছে।

৯) ষষ্ঠ শ্রেণী: মুসলিম সাহিত্যিক কায়কোবাদের লেখা ‘প্রার্থনা’ নামক কবিতাটি বাদ দেওয়া হয়েছে।

১০) সপ্তম শ্রেণী: বাদ দেয়া হয়েছে ‘মরু-ভাস্কর’ নামক শেষ নবীর সংক্ষিপ্ত জীবনচরিত।

১১) অষ্টম শ্রেণী: বাদ দেওয়া হয়েছে ‘বাবরের মহত্ত্ব’ নামক কবিতাটি।

১২) অষ্টম শ্রেণীর বাংলা বই থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে বেগম সুফিয়া কামালের লেখা ‘প্রার্থনা’ কবিতা।

১৩) নবম-দশম শ্রেণী: সর্বপ্রথম বাদ দেওয়া হয়েছে মধ্যযুগের বাংলা কবি শাহ মুহম্মদ সগীরের লেখা ‘বন্দনা’ নামক ইসলাম ধর্মভিত্তিক কবিতাটি।

১৪) নবম-দশম শ্রেণী: এরপর বাদ দেওয়া হয়েছে মধ্যযুগের মুসলিম কবি ‘আলাওল’-এর ধর্মভিত্তিক ‘হামদ’ নামক কবিতাটি।

১৫) নবম-দশম শ্রেণী: আরো বাদ দেওয়া হয়েছে মধ্যযুগের মুসলিম কবি আব্দুল হাকিমের লেখা ‘বঙ্গবাণী’ কবিতাটি।

১৬) নবম-দশম শ্রেণী: বাদ দেওয়া হয়েছে শিক্ষণীয় লেখা ‘জীবন বিনিময়’ কবিতাটি। কবিতাটি মোঘল বাদশাহ বাবর ও তার পুত্র হুমায়ূনকে নিয়ে লেখা।

১৭) নবম-দশম শ্রেণী: বাদ দেওয়া হয়েছে কাজী নজরুল ইসলামের লেখা বিখ্যাত ‘উমর ফারুক’ কবিতাটি।

উপরের বিষয়গুলো বাদ দিয়ে নতুন স্কুলপাঠ্য বাংলা বইয়ে নীচের বিষয়গুলো প্রতিস্থাপিত করা হয়েছে:

১) পঞ্চম শ্রেণী: স্বঘোষিত নাস্তিক হুমায়ূন আজাদ লিখিত ‘বই’ নামক একটি কবিতা, যা মূলত মুসলমানদের ধর্মীয় প্রন্থ পবিত্র কুরআন না পড়ার ব্যাপারে ইঙ্গিতমূলক কবিতা।

২) ষষ্ঠ শ্রেণী: প্রবেশ করানো হয়েছে ‘বাংলাদেশের হৃদয়’ নামক একটি কবিতা। যেখানে রয়েছে হিন্দুদের ‘দেবী দুর্গা’র প্রশংসা।

৩) ষষ্ঠ শ্রেণী: সংযুক্ত হয়েছে ‘লাল গরুটা’ নামক একটি ছোটগল্প। যা দিয়ে কোটি কোটি মুসলিম শিক্ষার্থীদেরকে শেখানো হচ্ছে গরু হচ্ছে মায়ের মত, অর্থাৎ হিন্দুত্ববাদ।

৪) ষষ্ঠ শ্রেণী: অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে ভারতের হিন্দুদের তীর্থস্থান রাঁচি’র ভ্রমণ কাহিনী।

৫) সপ্তম শ্রেণী: ‘লালু’ নামক গল্পে মুসলিম ছাত্রছাত্রীদেরকে শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে পাঁঠাবলির নিয়ম কানুন।

৬) অষ্টম শ্রেণী: পড়ানো হচ্ছে হিন্দুদের ধর্মগ্রন্থ ‘রামায়ণ’-এর সংক্ষিপ্ত রূপ।

৭) নবম-দশম শ্রেণী: প্রবেশ করেছে ‘আমার সন্তান’ নামক একটি কবিতা। কবিতাটি হিন্দুদের ধর্ম সম্পর্কিত ‘মঙ্গল কাব্যে’র অন্তর্ভুক্ত, যা দেবী অন্নপূর্ণার প্রশংসা ও তার প্রতি প্রার্থনাসূচক কবিতা।

৮) নবম-দশম শ্রেণী: অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে ভারতের পর্যটন স্পট ‘পালমৌ’ এর ভ্রমণ কাহিনী।

৯) নবম-দশম শ্রেণী: পড়ানো হচ্ছে ‘সময় গেলে সাধন হবে না’ শিরোনামে বাউলদের বিকৃত যৌনাচারের কাহিনী।

১০) নবম-দশম শ্রেণী: ‘সাঁকোটা দুলছে’ শিরোনামের কবিতা দিয়ে ৪৭-এর দেশভাগকে হেয় করা হয়েছে, যা দিয়ে কৌশলে ‘দুই বাংলা এক করে দেওয়া’ অর্থাৎ বাংলাদেশকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার ইঙ্গিত দেওয়া হচ্ছে।

১১) নবম-দশম শ্রেণী: প্রবেশ করেছে ‘সুখের লাগিয়া’ নামক একটি কবিতা, যা হিন্দুদের রাধা-কৃষ্ণের লীলাকীর্তন।

১২) প্রাথমিক ও উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে দেওয়া হয়েছে ‘নিজেকে জানুন’ নামক যৌন শিক্ষার বই।

 

পাঠকের মতামত: